মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ অপরাহ্ন
বেতাগী প্রতিনিধি॥ কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকানে পরম যত্নের সাথে কাজ করেন। ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী চায়ের কাপ বা গ্লাসটি বারবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পুনরায় চা পরিবেশন করেন। দোকানের ক্রেতাদের সাথে কথাও বলেন মাধুর্য নিয়ে। তার মিষ্ট ব্যবহারে জাতি ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায় উপেক্ষা সকলে ছুটছে চা-পান করার জন্য। এভাবে জীবন জীবিকার সংগ্রামে কাজ করছেন শ্রাবণী।
শ্রাবণীর পুরো নাম শ্রাবণী রানী হাওলাদার। বয়স ৩০ বছর। দু সন্তানের জননী। বরগুনার তালতলী উপজেলার বদিপাড়া গ্রামের দিনমজুর নকুল চন্দ্র হাওলাদার ও গৃহিনী কুঞ্জু রাণীর ১ ছেলে এবং ৩ মেয়ে মধ্যে শ্রাবণী ৪র্থ।
জানা যায়, বিয়ের প্রথম ৫ বছর স্বামীর উপার্জিত টাকায় ভালোভাবেই কেটে যায় দাম্পত্য জীবন। শ্রাবণীর স্বামী নরেন রাজ মিস্ত্রি ও দিনমজুরের কাজ করতেন। এরপর তার অস্থিতে ক্ষয়জনিত রোগ দেখা দেয়। পরিশ্রমের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা খরচসহ ব্যয় মেটানো অসম্ভব হয়ে ওঠে।
এরপর জীবিকার টানে থেমে নেই শ্রাবণী। গত ৬ বছর ধরে তার উপার্জনে স্বামী, শাশুড়ি ও দুই সন্তানের পড়ালেখাসহ সকল খরচ চলছে। বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের চৌ-মাথার শহরের প্রবেশ পথে সড়কের পাশে ভাসমান চায়ের দোকান করে। ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী চা, পান, সিগারেট, বাদাম, চানাচুর, রুটি, কলা, বিস্কুট ও বিভিন্ন ধরনের চকোলেট পরিবেশন করছেন।
শীতের মৌসুমে দুধ, রুটি ও ডিমের চহিদা বেশি থাকে। তার দোকানে এগুলো বিক্রিও হচ্ছে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এতে গড়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে। আর সেই টাকাই চলছে স্বামীর চিকিৎসাসেবা, ৮ বছর বয়সী ছেলের পড়ালেখার খরচসহ যাবতীয় খরচ।
প্রবীণ সাংবাদিক আকন্দ শফিকুল ইসলাম জানান, শ্রাবণী ক্রেতাদের পরিবেশনের সকল গ্লাস, প্লেট, চায়ের কাপ পরিষ্কার পরিছন্ন রাখে এবং তার ব্যবহারে সকলে মুগ্ধ।
শ্রাবণী জানান, কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা করি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত কষ্টে সংসার চালাই। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সংস্থা সাহায্য করে নাই।
এ বিষয় পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর মো. নাসির উদ্দিন ফকির বলেন, ইতিমধ্য ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্যানেল মেয়র এ বি এম মাসুদুর রহমান খান বলেন, শ্রাবণীর প্রতি আমরা আন্তরিক। তবে সরকারি বিধি মোতাবেক সাহায্য করা হবে।
Leave a Reply